ছবিঃ সংবাদ সারাবেলা।
ঝিনাইদহ শহরের প্রাণকেন্দ্র পায়রা চত্বর হতে পুরাতন ডিসি কোর্ট অভিমুখে প্রায় ১ কিলোমিটার ফুটপাত ও সড়কের দুই পাশের বেশির ভাগ জায়গা দখল করে বসানো হয়েছে সারি সারি চা-সিঙ্গাড়ার দোকান, ফলের দোকান, স্ট্রিট ফুডের দোকান, সবজি ছাড়াও নানা রকমের ভ্রাম্যমান দোকান। রাস্তার দু’পাশের ব্যবসায়ীরা তাদের চাহিদা মতো ফলসহ বিভিন্ন সামগ্রী রেখে দখল করে নিয়েছে ফুটপাত। পরিচালনা করছে বিভিন্ন সবজি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যবসা। ব্যস্ত সড়কের পাশে দখলকৃত স্থানে যে যার মতো নিত্যপণ্য কেনাবেচায় মগ্ন। যে কারণে ফুটপাত ধরে হাঁটাই কঠিন। বিশেষ করে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের। ফলে পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে গাড়ির ভিড়ের মধ্যে মূল সড়কে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শহরের পুরনো ডিসি কোর্ট এলাকায় ব্যস্ততম সড়কের দু’পাশের অংশ এখন ভাসমান দোকানিদের দখলে। সড়ক ও ফুটপাত দখল করে মাছ, শাকসবজি, ফল, ফুসকা, ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান বসানো হয়েছে। বাজারটি সপ্তাহের প্রতিদিনই বসলেও প্রশাসনের কোন বিভাগের টনক নড়েনি। নীরব রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং হাইওয়ে পুলিশ। অথচ প্রকাশ্যে বাজারটি বসছে খোদ জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনে। তবুও বাজারটি উচ্ছেদে কারও দৃষ্টি নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ থেকে এর কোন ইজারা নেই অথচ বেশ কয়েকমাস ধরে বাজারটি জমজমাট। সড়ক দখল করে একদিকে ভ্রাম্যমাণ হাটবাজার অন্যদিকে উপজেলা রোডের মাথায় একটি সিএনজি স্ট্যান্ড থাকার কারণে সেখানকার সড়কে নিত্যদিন যানজট লেগেই থাকে। ওই সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে দুর্বৃত্তরা চাঁদাবাজি করে থাকে বলে জানা গেছে। এ সবকিছুই নাকি সম্ভব হয়েছে মোটা অংকের লেনদেনে। ম্যানেজ করা হয়েছে উপর মহলের হর্তাকর্তাদের। যে কারণে অনেকের মুখ বন্ধ সেখানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেই কোন অভিযান।
তথ্য মিলেছে সড়ক ও ফুটপাত দখল করে বসানো অস্থায়ী এসব দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলা হচ্ছে। দোকানভেদে প্রতিদিন আদায় করা হয় ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। যাদের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে তাদের কাছ থেকে একসঙ্গে মাস শেষেও এই টাকা আদায় করা হয়।
উপজেলা পরিষদের ইজারা না থাকায় আদায়কৃত টাকা রাজস্বখাতে জমা হচ্ছেনা অথচ দিব্যি চলছে মহাসড়কের বিষফোঁড়া অবৈধ এ হাটবাজার ও সিএনজি স্ট্যান্ড । জনমনে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তাহলে কাদের পকেট ভারি করে চলছে বিপদজ্জনক সিএনজি স্ট্যান্ড ও বাজারটি?
অভিযোগ আছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও এর অঙ্গসংগঠনের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এসব অবৈধ দোকানপাটের সুবিধাভোগী। বিভিন্ন সেক্টরে উৎকোচ দেওয়ার পাশাপাশি নেতাদের ক্ষমতার দাপটে বহাল তবিয়তে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এসব অবৈধ দখলদাররা।
কালেক্টরেট স্কুলের শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার বলেন, সিএনজি ষ্ট্যান্ড ও রাস্তার দুই পাশের ব্যবসায়ীরা রাস্তা দখল করে রাখায় তীব্র যানজট পেরিয়ে তাদের স্কুল-কলেজে যেতে হয়। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
মিজানুর রহমান সুজন নামে এক ব্যক্তি জানান, শহরে একদিকে যানজট, অন্যদিকে ফুটপাত বেদখল। সাধারণ মানুষ চলাচল করবে কীভাবে। এতে শহরের নান্দনিকতা বিনষ্ট হচ্ছে। শহরের সৌন্দর্য অক্ষুণ্ণ রাখতে ও নান্দনিকতা ফিরিয়ে আনতে হকারদের পুনর্বাসন করে কিভাবে ফুটপাতগুলো পথচারী চলাচলের জন্য মুক্ত করা যায় সে ব্যাপারে পৌর কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চেয়েছেন। এছাড়াও পৌর শহরে যানজট নিরসনে অটোরিকশা পার্কিংয়ের জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি এম. এ মজিদের নির্দেশনা রয়েছে ৫ই আগষ্টের পর ফুটপাত থেকে কোন প্রকার চাঁদাবাজি চলবেনা। যদি কেউ জোরপূর্বক দখল ও চাঁদাবাজির সাথে জড়িত থাকে তবে তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হবে।
স্থানীয় লোকজন জানান, মহাসড়কের উপর এভাবে বাজার বসানো পুরোপুরি অবৈধ। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করতে বাজারটি বন্ধ করা জরুরী। এই বাজার ঘিরে চলছে নীরব চাঁদাবাজি। চাঁদার ভাগ বসাচ্ছে স্থানীয় কিছু অসাধু লোকজন।
এছাড়াও শহরে বেড়েছে অটোরিকশা চালকদের দৌরাত্ম্য। রাস্তার মাঝখানে অটোরিকশা থামিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ সেরে নেয়া, যাত্রী ওঠানো-নামানোর কাজ অবলীলায় করে তারা। পরোয়া করে না মানুষের ভোগান্তির কথা। পৌর শহরের মোড়ে মোড়ে অবৈধ স্ট্যান্ড হওয়ায় অনেক সময় পায়ে হাঁটাও দুষ্কর হয়ে পড়ে। অবৈধ স্ট্যান্ডের কারণে শহরের বিভিন্ন সড়কে যানজট লেগেই থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এতে প্রতিদিন সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। মহাসড়কের জায়গায় যানবাহন চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঝিনাইদহ পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনে কাঁচাবাজার বসানোর বিষয়টি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ অবগত নয়। তবে বিষয়টি পৌর প্রশাসক কে অবগত করা হবে। তিনি আরও বলেন, পৌরসভার জায়গায় যারা অস্থায়ী দোকান খুলে জনর্দূভোগ সৃষ্টি করেছে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশের টিআই (সদর) মশিউর রহমান বলেন, আমরা সড়কে যানজট নিরসনে ভ্রাম্যমাণ গাড়িগুলো না বসার জন্য সব সময় বলে থাকি। এ বিষয়ে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।
ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মো.আব্দুল আওয়াল জানান, যানজট নিরসনে অটোরিকশা ও সিএনজি স্ট্যান্ড পার্কিংয়ের জন্য আলাদা জায়গা নির্ধারণ ও হকারদের পুনর্বাসন করে কিভাবে ফুটপাতগুলো পথচারী চলাচলের জন্য মুক্ত করা যায় সে ব্যাপারে পৌরসভার প্রশাসকের সাথে আলোচনা হয়েছে। তবে এর আগে চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কিছু ফুটপাত হকারমুক্ত করা হয়েছে। জনভোগান্তি লাঘবে ফুটপাত দখলমুক্ত করাসহ জনগণ যাতে নির্বিঘ্নে ফুটপাত দিয়ে চলাফেরা করতে পারে সেজন্য দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh